মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
অন্তর রায়, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে বাড়ীর সামনে কয়েকজন গোল করে আগুন পোচ্ছিলো।এমন সময় মাতাল অবস্থায় এক প্রতিবেশি আগুন তাপানোরত অবস্থায় থাকা এক ব্যক্তির নিকট সিগারেট চান। কিন্তু সেই ব্যক্তি মাতাল লোকটিকে সিগারেট না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সিগারেট না দেওয়া ব্যক্তির উপর হামলা চালান। এমনকি আগুন তাপানোর জ্বলন্ত খড়ি দিয়ে তার গলায় ছ্যাকা দেন। এমন অবস্থায় গলায় আগুনের ছ্যাকা খাওয়া ব্যক্তি আত্মরক্ষার্থে পাশের বাড়ীতে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে আবারও সেই মাতাল ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনরা একত্রিত হয়ে সেই ব্যক্তিকে মারধর করতে উদ্যত হন। এসময় যে বাড়ীতে তিনি আশ্রয় নেন সেই বাড়ীর লোকেরা হামলাকারীদের বাধা দিলে পরিস্থিতি হয়ে উঠে আরও ঘোলাটে। উল্টো সেই ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে তাদের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে চারজন মহিলা ও একজন পুরুষকে পিটিয়ে ও ইট নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত জখম করেন।পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নারকীয় এ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ জানুয়ারী ঠাকুরগাঁও শহরের ফকিরপাড়া সুইপার কলোনী এলাকায়।পরবর্তীতে হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেবী রাণী বাদী হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরনে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারী রাতে শহরের ফকিরপাড়া সুইপার কলোনী মৃত কাজলের বাড়ীতে বেশকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছিলো। এমন সময় সেখানে মাতালরত অবস্থায় উপস্থিত হন নুর ইসলাম(নব মুসলিম)।
তিনি সেখানে বদিউজ্জামান এর নিকট তার জ্বলন্ত সিগারেটটি চান। কিন্তু বদিউজ্জামান তাকে সিগারেট না দিলে তিনি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন জ্বালানোর স্থান থেকে জ্বলন্ত একটি খড়ি দিয়ে বদিউজ্জামানের গলায় সজোড়ে আঘাত করেন। এসময় বদিউজ্জামান প্রাণ রক্ষার্থে পাশের ফুলো রাণীর বাসায় আশ্রয় নেন। কিন্তু নুর ইসলাম এসময় তার আত্মীয়-স্বজনদের ডেকে নিয়ে সেই বাড়ীতে গিয়ে টানা হেচড়া করে বদিউজ্জামানকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এসময় ফুলো রাণীর পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে হামলাকারিা। এবার তারা আর বদিউজ্জামানকে নয় সেই পরিবারের সদস্যদের উপর রড, লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ী-ঘর ভাঙচুর সহ এলোপাতারী ইট নিক্ষেপ করে ফুলো রাণীসহ তার ছেলে প্রশান্ত, মেয়ে বেবী রাণী, বৌমা আদুরী ও ননদ মুক্তা রাণীকে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বেবী রাণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আর বাকিরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। পরবর্তীতে ঘটনার কয়েকদিন পর হামলার শিকার হওয়া পরিবারের সদস্য বেবী রাণী বাদী হয়ে কোর্টে তীর্থ দাস, পিতা-মাধব দাস, চন্দনা রাণী, স্বামী-অরুন দাস, বলোরাম চন্দ্র দাস, পিতা-মাধব চন্দ্র দাস, দীনবন্ধু দাস, পিতা-মাধব চন্দ্র দাস, শ্রীকান্ত দাস, পিতা- মৃত-তুলা দাস, পলাশ দাস, পিতা-মৃত-তুলা দাস, নুর ইসলাম(নব মুসলিম), পিতা-মৃত-তুলা দাস, দীপক দাস, পিতা-মৃত-প্রতাপ দাস ও তুলসী রাণী, স্বামী–দীপক দাস, সর্ব সাং- ফকিরপাড়া সুইপার কলোনী উল্লেখ করে ৯জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এদিকে মামলার পর আসামীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা মামলা না তুলে নিলে বাদীদের প্রাণ নাশের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।এ অবস্থায় নিাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি। পরিবারের কর্তা ব্যক্তি ফুলো রাণী জানান, আমার একমাত্র ছেলে প্রশান্ত আসামীদের ভয়ে বাড়ী থেকে বের হতে পারছে না। তারা আমার ছেলেকে বাহিরে দেখলেই লাঠি-সোটা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে এবং প্রাণ নাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে।আমি অন্যায়ভাবে আমার পরিবারের উপর এধরণের হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আশিকুর রহমান জানান, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।এছাড়া আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।